বিনোদন

'কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ অনেক দিন পর মুক্তি পেল

শিরিন আক্তার মুন্নি: প্রায় সাড়ে তিন বছরের চেষ্টায় বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্প নিয়ে ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম ।এটি পরিচালকেরও প্রথম ছবি। ধ্রুপদি চিত্রলোক নিবেদিত এ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন জয়িতা মহলানবিশ, উজ্জ্বল কবির, সুমী ইসলাম, সামিয়া আখতার, বাদল শহীদ, মাহমুদ আলম ও আবুল কালাম আজাদ। সংগীতায়োজন করেছেন সাত্যকি ব্যানার্জি। দরিদ্র কৃষকদের জীবিকার লড়াইকে তুলে ধরে ছবিটি নির্মাণ করেছেন মহম্মদ কাইয়ুম। ছবিটি বাংলাদেশে প্রথম মুক্তি পেয়েছে গত ৪ নভেম্বর।

বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশে বৈষম্য-বঞ্চনার মাঝে টিকে থাকা প্রান্তিক মানুষের সম্মিলিত লড়াইয়ের গল্প নিয়ে ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমাটি বানানো হয়েছে।হাওড়ের জল ও কাদায় মেশা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উঠে এসেছে কাহিনীতে। বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলের বিস্তীর্ণ হাওড়ের মানুষের আবহমানকাল ধরে চলা জীবন সংগ্রাম এই চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু। পাশাপাশি এই সিনেমার গানগুলোও ওই অঞ্চলের স্থানীয় ভাষার।

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ ছবিটির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে হাওড়ের ধানকাটা কৃষক পরিবারের জীবনসংগ্রাম নিয়ে। হাওড়ের দরিদ্র কৃষকদের জীবিকার লড়াই নিয়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সঙ্গী করে পেটের তাগিদে বেঁচে থাকার দুর্নিবার যুদ্ধকে সঙ্গী করে। হাওড়ের জীবন কেমন তা জানা যাবে এই সিনেমাতে। কি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে যে থাকে সেখানকার মানুষেরা সেই চিত্রটাই তুলে ধরা হয়েছে।

কুড়া পক্ষী হাওড় এলাকার এক জাতের পাখি। তার নির্দিষ্ট কোনো বাসা নাই। যেখানে খাবার পায় সেখানে ছুটে যায়। হাওরের শুকনো জায়গায় মাটি খুঁড়ে ডিম পাড়ে। এখানে পাখির কথা বলা হলে পাখির জীবনচিত্রের সাথে ওই অঞ্চলের সংগ্রামী মানুষদের জীবন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তবে এটা বলা যায় হাওড়কে দেখার ও ভাববার চোখ বদলে দেবে এই ছবি। হাওড়ের বিপর্যস্থ প্রান্তিক মানুষগুলো যখন খেতে না পেয়ে কুড়া পক্ষীর মতো শহরে চলে যায় দু মুঠো ভাতের আশায়, সেই পটভূমিতে তৈরি এই সিনেমাটি।  

২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা সিনেমার পুরস্কার হিসেবে ‘গোল্ডেন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ পুরস্কার জিতে নিয়েছে বাংলাদেশের সিনেমা ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে খবরটি প্রকাশ করা হয়েছে। 
তবে মুহাম্মদ কাইউম পরিচালিত ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’র সঙ্গে যৌথভাবে উৎসবের সেরা পুরস্কার পেয়েছে স্পেনের সিনেমা ‘আপন এন্ট্রি’।

দীর্ঘদিন পরে বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়ার পর সিনেমাটি অস্ট্রেলিয়ায় দেখা যাবে। সিডনী এবং মেলবোর্নে দুটো প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। সিডনির ব্যাংকসটাউনের আর মেলবোর্নের চ্যাডস্টোনের হোয়টস সিনেমা হলে প্রদর্শিত হবে রোববার (৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায়।

অস্ট্রেলিয়ায় চলচ্চিত্রটির পরিবেশক বঙ্গজ ফিল্মস। বঙ্গজ ফিল্মসের স্বত্বাধিকারী তানিম আল মিনারুল মান্নান বলেন, দর্শকদের সাড়া পেলে চলচ্চিত্রটির আরও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, আপনারা সপরিবারে সিনেমা হলে এসে চলচ্চিত্রটি দেখুন, বাংলাদেশকে জানুন। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের কাছে ফিরে আসুন যেখানে সকল প্রবাসীর শেকড় গ্রথিত। প্রবাসী দ্বিতীয় প্রজন্মকে তার শেকড়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। এই চলচ্চিত্রের চিত্রায়ণ এবং শব্দ ধারণ এমনভাবে করা হয়েছে যাতে দর্শক নিজের অজান্তেই চলচ্চিত্রের অংশ হয়ে যাবেন।

ছবিঃ সংগৃহিত