শীর্ষ সংবাদ

বদলে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন নীতি

আবু রেজা আরেফিন: আগামী দুই বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী গ্রহণের পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসার নিয়ম আরও কঠোর করা হবে বলে ঘোষণা  দিয়েছে সরকার । ২০২৫ সালের জুন নাগাদ বার্ষিক অভিবাসী অনুমোদনের পরিমাণ কমিয়ে ২৫০ হাজারে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। নতুন অভিবাসন কৌশলের লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়াতে  অভিবাসন 'টেকসই স্তরে' কমিয়ে আনা।

২০২২-২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় নেট অভিবাসন রেকর্ড ৫০০ হাজারে পৌঁছে যাওয়ার  প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও কম দক্ষ কর্মীদের জন্য ভিসাবিধি কঠোর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিল সরকার। এর আগের সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজি বলেছিলেন, দেশের অভিবাসন সংখ্যাকে একটি টেকসই পর্যায়ে ফিরিয়ে আনা দরকার। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

মিঃ আলবানিজ বলেন অস্ট্রেলিয়ার কিছু নতুন আগমন অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় স্বার্থে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে না। নতুন কৌশল প্রকাশের আগে কথা বলতে গিয়ে, প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজি সিস্টেমটি ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন "আমাদের অভিবাসন স্তরকে টেকসই পর্যায়ে নিয়ে আসা দরকার", তখন  তিনি বিশেষ করে বিদেশী ছাত্রদের উপর ক্র্যাকডাউনের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড মহামারি চলাকালীন সময় কঠোর সীমান্ত নীতিতে প্রায় দুই বছর বিদেশি ছাত্র এবং কর্মীদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা ছিল। এতে করে অস্ট্রেলিয়াতে অভিবাসী কর্মীদের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। ঘাটতি পূরণে গত বছর তার বার্ষিক অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ভিসানীতি শিথিল করে সরকার। কিন্তু হঠাৎ করে অধিক সংখ্যায় বিদেশি কর্মী ও শিক্ষর্থীদের আগমনে অস্ট্রেলিয়াতে আবাসন সংকট দেখা দেয় এবং বাড়িভাড়া বেড়ে যায় বহুগুন।

সিডনি মর্নিং হেরাল্ড সংবাদপত্রের করা একটি সমীক্ষা বলেছে, ৬২ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ান মনে করেন, দেশে অভিবাসীদের সংখ্যা খুব বেশি। অস্টেলিয়ান সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় মোট অভিবাসী প্রবেশ করেছে ৫১০ হাজার। তবে নতুন ভিসা নীতিতে ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় এক-চতুর্থাংশে নেমে যাবে, যা কোভিড মহামারির ঠিক আগের সময়ের কাছাকাছি।

এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার হোম অ্যাফেয়ারস  মিনিস্টার ক্লেয়ার ও’নেইল এমপি সোমবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমাদের কৌশল হবে অভিবাসন সংখ্যাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, তিনি বলেন, ‘এই কৌশল আমাদের দেশে অভিবাসী গ্রহণের পরিমাণকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নামিয়ে আনবে। এটি কেবল অভিবাসীর সংখ্যা, নির্দিষ্ট কোনো সময় বা আমাদের দেশে বর্তমানে অভিবাসীদের কারণে যে সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার বিষয় না, এটা অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যতের প্রশ্ন।’ তিনি আরো বলেন  “আমাদের অভিবাসন কৌশল হল সমস্ত অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য অভিবাসন পুনরায় কাজ করার জন্য একটি সাহসী পরিকল্পনা। “কৌশলটি আমাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা পেতে সাহায্য করবে।

১০ বছর মেয়াদি অভিবাসন কৌশল উন্মোচন করে হোম অ্যাফেয়ারস  মিনিস্টার ক্লেয়ার ও’নেইল এমপি বলেন, সরকারের নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিদেশি শিক্ষার্থীদের এখন ইংরেজি ভাষায় কেবল নূন্যতম দক্ষতা থাকলে চলবে না। যারা দ্বিতীয় দফায় ভিসার আবেদন করবেন তাদেরও পরীক্ষায় বসতে হবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে অভিবাসী গ্রহণের পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসার নিয়ম আরও কঠোর করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।

অস্ট্রেলিয়ায়  দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। আর তাই স্বল্প দক্ষ শ্রমিকদেরও ভিসা কঠোর করবে অস্ট্রেলিয়া। পাশাপাশি অভিজ্ঞ অভিবাসী আকৃষ্ট করতে তাদের স্থায়ী বসবাসের পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা পরিকল্পনা করা হয়েছে। সরকারের নেয়া নতুন নীতিগুলো অস্ট্রেলিয়ায় দক্ষ কর্মীদের আরও বেশি আকর্ষণ করবে পাশাপাশি এখানে বসবাসরত শিক্ষার্থী ও কর্মীদের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করবে।

নতুন নীতির অনুযায়ী- একজন বিদেশি শিক্ষার্থীকে ইংরেজি পরীক্ষায় (আইএলটিএস) বর্তমানের তুলনায় আরও অধিক রেটিং পেতে হবে। এছাড়া প্রথমবার আবেদন বাতিল হলে দ্বিতীয়বার আবেদন করলে তার আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে অধিক সময়ক্ষেপণ হবে বলেও জানিয়েছে সরকার ।
অন্যদিকে উচ্চ দক্ষ কর্মীদের জন্য একটি নতুন বিশেষজ্ঞ ভিসা চালু করা হবে, যা প্রক্রিয়াকরণের সময় লাগবে মাত্র এক সপ্তাহ। এর ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সহজেই দক্ষ অভিবাসীদের নিয়োগ করতে পারবেন। যা অন্যান্য উন্নত অর্থনীতির দেশের সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।

সরকার আশা করছে নতুন কৌশল অভিবাসনকে টেকসই স্তরে ফিরিয়ে আনবে, ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা আছে তা নিশ্চিত করবে এবং শেষ পর্যন্ত, সিস্টেমটি সমস্ত অস্ট্রেলিয়ানদের স্বার্থে কাজ করছে তা নিশ্চিত করবে।