শীর্ষ সংবাদ

শখের থিয়েটার এর প্রযোজনায় সিডনীতে মঞ্চস্থ হলো বহুল আলোচিত নাটক কিত্তনখোলা

আবু রেজা আরেফিন :  ২ মার্চ শনিবার, সন্ধ্যায়  সিডনীর ব্যাংকসটাউনের অভিজাত থিয়েটার মঞ্চ ব্রায়ান ব্রাউন থিয়েটারে, উপচেপড়া দর্শকের ভিড়ে শখের থিয়েটার এর প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হলো  নাটক কিত্তনখোলা। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের  মহাকাব্যিক উপাখ্যান ও শাহীন শাহনেওয়াজ নির্দেশিত এই নাটকটি  সিডনীতে প্রথমবার প্রদর্শিত হলো । এর আগে শখের থিয়েটারের নাটক ‘কঞ্জুস‘ সফলভাবে সিডনী  ও ক্যানবেরায় মঞ্চস্থ হয় এবং বিপুল জনপ্রিয়তা  অর্জন করে।

সিডনীর মঞ্চে  কিত্তনখোলা নাটকে আফজাল হোসেন , সুবর্ণা মোস্তাফা , পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাইসুল ইসলাম আসাদ বা শহীদুজ্জামান সেলিমরা ছিলেন  না।  সিডনীর কিছু দুঃসাহসী নবীন ও প্রবীণ নাটক পাগল মানুষের অভিনয়ে এ নাটকটি দীর্ঘদিন মনে রাখবে সিডনির নাট্যপ্রেমী দর্শকরা। হলভর্তি দর্শক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতি দৃশ্য রুদ্ধশ্বাসে পিনপতন নীরবতায় উপভোগ করেছেন । মঞ্চ সজ্জা , মঞ্চ ব্যবস্থপনা  ,আলোকসম্পাত ও শব্দসঞ্চালণায় ছিল মুন্সিয়ানার পরিচয়। এছাড়াও শিল্পীদের সাজসজ্জা ছিল চমৎকার।

এই প্রবাসের মাটিতে কিত্তনখোলার মত কঠিন একটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করা, সত্যিকার অর্থে একটি দুঃসাহসিক কাজ ,স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে  সেই কঠিন কাজটাই অত্যন্ত সাবলীল ভাবে সফল মঞ্চায়ন করে দেখালেন নির্দেশক শাহীন শাহনেওয়াজ। এগিয়ে চলার যে মন্ত্রে নির্দেশক কলাকুশলীদের তৈরি করেছেন তা এক কথায় অনবদ্য।

বাংলা নাটকের শাস্বত সুর ছড়িয়ে দাও বহুদূর  এই স্লোগানে সামনে রেখে সিডনীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শখের থিয়েটার নামে একটি নাট্য দলের যাত্রা শুরু হয় , অক্লান্ত পরিশ্রম করে  সিডনীতে মঞ্চ নাটক চালু করেন শাহীন শাহনেওয়াজ প্রায় বছর দশেক আগে। এরই মধ্যে সফলভাবে  ‘কঞ্জুস‘  নাটকটি ব্যাপক সারা ফেলে প্রবাসের নাট্যপ্রেমীদের মধ্যে। শখের থিয়েটার মানে ভিন্ন ধরণের একটি সংযোজন এটাই তারা আবার প্রমান করলো।

নাটকের কাহিনী সংক্ষেপ  (সংগৃহিত)

কিওনখোলা নাটকটিতে বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের যাপিত জীবনের ইতিহাস বর্ননা করা হয়েছে। এই নাটকটি গ্রামবাংলার মানুষের সামাজিক ও পেশাগত রুপান্তরের নাটক। রুপান্তরের নায়ক সোনাই কিওনখোলার মেলায় এসে আমাদের সমাজ অভ্যন্তরে বিদ্যমান পেশাগত রুপান্তরের বস্তুগত রূপটি দেখতে পায়। যাত্রাদলের নায়িকা বনশ্রী, সোনাই, বছির, গোলাপগাছি, প্রত্যেকেই রুপান্তরিত জীবনের মর্মবেদনা বয়ে বেরাচ্ছে।
লাউয়া রুস্তমের সঙ্গে ঘটে সোনাই এর সর্বশেষ রুপান্তর। লাউয়া সম্প্রদায়ের মেয়ে ডালিমনের চিত্তে রুপান্তরের ঢেউয়ের দোলা। ইঁদু কন্টাকটার সামাজিক রুপান্তরের ফসল।

যে শোষনযন্ত্র সমাজের পেশাগত রুপান্তরকে ত্বরান্বিত ও দ্রুততর করে ইঁদু কন্টাকটর তার চালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ।
সোনাই, বছির, রুস্তম, গোলাপগাছি, বনশ্রী, মালকা, ডালিমন, রবিদাশ, সুবলঘোষ,ছায়ারঞ্জন রুপান্তরিত জীবনের প্রতিচ্ছবি। জীবনের অর্থ খুঁজতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছে।

সহস্র বাঁক পরিবর্তন অবলোকন করে শেষ পর্য্যন্ত জীবন আসলে কি তাঁরা আর খুঁজে পায় না। জীবনের বাঁকে বাঁকে মানুষের জন্য অপেক্ষা করে রুপান্তর। সামাজিক মানুষের এই রুপান্তরের পালা উপস্থাপিত হয় এই কিওনখোলা'র মেলায়। এই মেলায় মহাজীবনের কলরোল সার্বক্ষনিক উদ্ভাস্তি। এ মেলায় আনন্দ নিতে আসে সাধারণ মানুষেরা।

বিচিত্র স্বভাব ও বিচিত্র শ্রেনির মানুষের এই সমাবেশে প্রতিহিংসা চরিতার্থ হয়, সর্বস্ব খোয়ায় কেউ, কেউবা করে হত্যা-আত্মহত্যা নানান সামাজিক কর্ম-অপকর্ম মেলায় বহু বর্ণিল সামিয়ানার নিচে অবলোকিত হয়। কিওনখোলার মেলায় রংবাহারি আনন্দের অমৃত আনন্দধারার সঙ্গে স্রোতস্বিনী দুঃখের নদী,ক্ষয় আর স্বপ্ন ভাঙার অন্তহীন প্রবাহ অবলোকিত হয়।

যারা অভিনয় করেছেন:
ছায়ারঞ্জন - শাহীন শাহনেওয়াজ , সুবল ঘোষ - সুব্রত সরকার, রবিদাশ - ফয়সাল খান , বনশ্রীবালা - আফসানা রুচি , ইদু কনকদার -শাওন অরিজিৎ , মালেক - মেহেদী হাসান , সোনাই - শাকিল চৌধুরী , ডালিমন - মাসহুদা জামান ছবি , বছির - বুল্বুল আহমেদ সাজু , মালকা - আফ্রা অর্চি হোসেন , ননীবালা - শাজনীন মাহমুদ সারা , গোলাপগাছি - মোঃ আখতার হোসেন , বৃদ্ধা - শিরিন আক্তার মুন্নি , গাড়িওয়ালা ,হাজির আলি ও রুস্তম - মেহবুব রানা হিল্লোল , বায়োস্কোপেওয়ালা ও গ্রামবাসি - সায়েম হোসেন , জুয়ার মালিক ও গ্রামবাসী - আশিকুর রহমান , ভিক্ষুক ও গ্রামবাসি - জিসান , যাত্রার প্রচারক ও ওষুধ বিক্রেতা - জাকি খন্দকার , গ্রামবাসি - সৈয়দ আজিম চঞ্চল , সারাফ , সামিনা , শিশু শিল্পী ছুটনি - সামায়লা চৌধুরী , ছোটদের গানের দল - মীর সেহরিশ আনশারাহ , আদ্রিতা হোসেন , নিথিলা  আহমেদ ,রোদেলা আহমেদ।
সংগীতায়োজন ছিলেন: আবহ সঙ্গীত - নাফিস ইসলাম , কণ্ঠশিল্পী ও হারমোনিয়াম - ফারিয়া আহমেদ , কণ্ঠশিল্পী ও মন্দিরা - লুনিয়া  আহমেদ , কণ্ঠশিল্পীভ গিটার -  ঊমাশংকর বড়ুয়া , তবলা - বিজয় সাহা , দোতারা - সজীব ফায়সাল।  

কিত্তনখোলা নাটকটির রচনা : নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ।  নির্দেশক: শাহীন শাহনেওয়াজ , নির্দশেকের সহকারী : আফসানা রুচি , মঞ্চ অধিকর্তা : বুলবুল আহমেদ সাজু , মঞ্চ নির্মাণ ও শিল্প নির্দেশনা: শাকিল চৌধুরী , মঞ্চ নির্মাণ সহযোগী : ফয়সাল খান, লরেন্স ব্যারেল, রাসেল, শন অরিজিৎ, লীনা ব্যারেল , আলোক নির্দেশনা: রাহুল গাঙ্গুলি , আবহ সঙ্গীত : নাফিস উল ইসলাম, সজীব ফয়সাল, ফারিয়া আহমেদ , নৃত্য নির্দেশনা : শাজনীন মাহমুদ সারা , পোশাক পরিকল্পনা : আফসানা রুচি, মাশুদা জামানের ছবি , দ্রব্যসম্ভার  নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা : সাফরিনা আলী সোনিয়া , শব্দ প্রক্ষেপণ : অ্যালভিন সোর পান্ডে , পোস্টার, টিকিট এবং স্যুভেনির ডিজাইন : লরেন্স ব্যারেল , রূপসজ্জা : জাকিয়া মুসান্না, শিরিন আখতার, নাজনীন শাহনেওয়াজ, রাহুল গাঙ্গুলি , মঞ্চ ব্যবস্থাপনা : অজয় ​​সিনা, শাদমান রউফ, সাজিদ জিয়া, ইশরাত আহমেদ চৌধুরী , 
মিলনায়তন ব্যবস্থাপনা : কাজী সামসুল আলম, অজয় ​​সিনা, জুবায়ের আলম রনি, সাদমান , সাদিয়া, আরিয়ানা, আরিয়া, আলাভি, আদ্রিকা, রায়েদ, নাভিদ ও সাখাওয়াত বাবু।

আলোকচিত্রী :হাসিব জাকারিয়া ,তুমোন আহসান , ভিডিও ধারণ : জন্মভূমি টেলিভিশন , মিডিয়া পার্টনার : জন্মভূমি টেলিভিশন ,রেডিও গান বাক্স , ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন , মুক্তমঞ্চ ও আবু তারিক।