কমিউনিটি

সিডনিতে আন্তর্জাতিক ভাষা উৎসব অনুষ্ঠিত

আন্তর্জাতিক ভাষা উৎসব

সিডনিতে আন্তর্জাতিক ভাষা উৎসব অনুষ্ঠিত

জন্মভূমি ডেস্ক: গত ১০ ডিসেম্বর সিডনিতে বহু ভাষা ও বহুজাতির অংশগ্রহনে আন্তর্জাতিক ভাষা উৎসব আনন্দমূখর পরিবেশে সাবকন্টিনেন্ট ফ্রেইন্ডস অব ক্যাম্পবেলটাউনের আয়োজনে পালিত হলো। এই সংগঠনটি দীর্ঘদিন যাবৎ কোন ভাষা যাতে হারিয়ে না যায় তার অক্ষুন্নতা ও সংরক্ষন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় সভা, সেমিনার আয়োজন করে নিজ নিজ মাতৃভাষাকে ব্যবহার ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সংগঠনটি ক্যাম্পবেলটাউন এলাকায় একটি “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতি সৌধ” প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করে স্থানীয় কাউন্সিলে প্রস্তাব দাখিল করেছে। বিষয়টি বর্তমানে কাউন্সিল কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন।

উৎসব মুখর পরিবেশ এবং রাজ্যের সংসদ সদস্য, বিভিন্ন কাউন্সিলের কাউন্সিলর ও বহুজাতিক সংগঠন ও স্কুলের প্রতিনিধি এবং অন্যান্য স্থানীয় অতিথিদের উপস্থিতিতে পরিপূণ ছিলো। তিনটি পর্বে ভাগ করা উৎসবের প্রথম পর্ব অস্ট্রেলিয়ার জাতীয়সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হবার পর নিউ সাউথ ওয়েলস কাউন্সিল প্যাসিফিক কমিউনিটির চেয়ারপারসন ম্যাল ফ্রুয়েন এবর্জিনাল কান্ট্রি ল্যান্ডের স্বীকৃতি পত্র পাঠ করা শেষ করেন।

উপস্থাপিকা দিপা মুখার্জীর আহবানে সংগঠনের সাধারন সম্পাদক কায়সার আহমেদ স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন। তিনি তার বক্তব্যে সংগঠনের আদর্শ উদ্দেশ্য তুলে ধরে বিশ্বে সকল মাতৃভাষার বর্তমান অবস্থান তুলে ধরেন। জনাব কায়সার উল্লেখ করেন ভাষা নিয়মিত ব্যবহার না করলে হারিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি তার সংগঠনের আজকের অনুষ্ঠান বাস্তবায়নের ও ক্যাম্পবেলটাউন এলাকায় “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতি সৌধ” প্রতিষ্ঠার উদ্দ্যোগে কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী সহ অন্যান্য কাউন্সিলরদের সর্বপ্রকার সহযোগিতার জন্যে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসেবে একে একে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশন অব কমিউনিটি লেংগুয়েজ এর প্রতিনিধি মিসেস ওয়াফা সাবোর্ণ, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও ছড়াকার অজয় দাশগুপ্ত এবং ভাষা বিশেষজ্ঞ এশ গোলকার। বক্তারা তাদের বক্তব্যে সকলের নিজ নিজ মাতৃভাষা রপ্ত ও ব্যবহার করার উপর জোর আরোপ করেন এবং কোন ভাষাই যেনো বিশ্বের বুক থেকে যাতে হারিয়ে না যায় তার উপর সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

উৎসবটিতে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সংসদের সদস্য ও শেডো মিনিস্টার আনোলক চেন্টাভন তার বক্তব্যে সাবকন্টিনেন্ট ফ্রেইন্ডস অব ক্যাম্পবেলটাউন এর উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং তিনি দৃঢ় ভাবে আশা করেন যে এ ধরনের কার্যক্রম আমাদের সকলের মাতৃভাষাকে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে। এ ছাড়াও আরো যারা বক্তব্য রাখেন কেম্বেলটাউন সিটির কাউন্সিলর ডাসি লাউন্ড, কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী, কাউন্সিলর জন চিউ, কাউন্সিলর ক্যারেন হান্ট এবং লিভারপুল সিটির কাউন্সিলরদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলর কারিশমা কালিয়ান্দা ও নেইথেন হ্যাগার্টি এবং ড. রফিকুল ইসলাম অন্যতম। বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন সভাপতি গামা আব্দুল কাদির ও ফারুক আহমেদ খান, কেম্বেলটাউন  ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রাক্তন সভাপতি ফাররুখ ইকবাল ও ক্যাম্পবেলটাউন মাল্টিকালচারাল সোসাইটির সভাপতি শফিকুল আলম অন্যতম।

উৎসবের অন্য আরো একটি সফল দিক ছিলো দ্বিতীয় পর্বে শিশুদের চিত্রা্গংন প্রতিযোগিতা। এতে প্রায় ১৩০ জনের অধিক শিশু কিশোর অংশগ্রহন করেন। জনাব আব্দুস সোবহান এর নেতৃত্বে উপস্থিত সকল ভাষাভাষীর শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারীদের মাঝে পদক ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করলে দেখা গেছে যে এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজনকে অভিভাবকগন বিশেষভাবে মূল্যায়ন করেছেন এবং এতে তারা অভাবিত আনন্দে আপ্লুত হয়েছেন। তৃতীয় পর্বে মিস সাকিনা আকতারের সঞ্চালনায় বহুজাতিক ভাষার স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে মনোজ্ঞ ও আকর্ষনীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশন করা হয়।

অস্ট্রেলিয়া সরকারের সহযোগিতায় পরিচালিত বিভিন্ন ভাষা শিক্ষাদানের স্কুল সমুহ এতে অংশগ্রহন করে। তাদের মধ্যে বাংলা ভাষার – বাংলা পাঠশালা, তামিল ভাষার – বালার মালার তামিল এডুকেশনার এসোসিয়েশন, মালালায়েম ভাষার-বালাকাইরালি মালালায়েম স্কুল মিন্টো, পাঠশালা নেপালি ভাষা স্কুল, উর্দু ভাষা – সিডনী উর্দু স্কুল, চাইনিজ মেন্ডারিন ভাষা – শেন এডুকেশন স্কুল, ইন্দোনেশিয়ান ভাষা স্কুল, বহুজাতিক ভাষা – আল ফায়সাল কলেজ এবং ইয়ং ইনোভেটরস অস্ট্রেলিয়া।  

এছাড়াও হল কক্ষে প্রবেশ পথে সারি করে ছিলো বিভিন্ন ভাষার বুথ, যেখানে বুথগুলো সাজানো হয়েছিলো ভাষা বর্নমালার বই, তুলে ধরা হয়েছিলো সেই সব দেশের ভাষা, ইতিহাস ও সংস্কৃতি। দেয়ালে শোভা পাচিছল বর্ণমালা ও ঐতির্হবাহী রঙ্গীন পোস্টার।  পরিদর্শন শেষে অনেকের সাথে আলোচনা করলে বোঝা গেছে তারা আনন্দিত ও এ ধরনের উৎসব আরো বড় পরিসরে করা প্রয়োজন যাকিনা বিশেষ করে আগামী দিনের অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের তাদের , মাতৃভাষা ও কৃষ্টি ধরে রাখার সহায়ক হবে। উল্লেখ্য যে এই বহুজাতিক বুথগুলো পরিচালনা ও সাজানোর দায়িত্ব সফল ভাবে সম্পন্ন করেছেন ড. রফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ফেরদৌস ওমি ও লিটন মাঝি। 

তথ্য সূত্র: প্রশান্তিকা 

ছবি:সংগৃহিত