কমিউনিটি

সিডনীতে নাট নন্দনের পালা গান “বিষ পবনের নাও” এবং নাটক “নারী ও রাক্ষসী”র মঞ্চায়ন

শিমি কাজী সুলতানাঃ বাংলাদেশ থেকে আসা ‘নাট নন্দন-এর পরিবেশনায় গত ৩রা ও ৪ঠা জুন শনি ও রবিবার  সন্ধ্যায় সিডনির হার্সটভিল সিভিক থিয়েটারে পালাকার আসমা আখতার লিজার রচনা ও নির্দেশনায় মঞ্চায়িত হয়েছে পালাগান ও নাটক। শনিবার ছিল পালা গান “বিষ পবনের নাও” এবং রবিবার ছিল নাটক “ নারী ও রাক্ষুসি”র মঞ্চায়ন। পালাগান ও অভিনয়ে দর্শক-শ্রোতাদের বিমোহিত করেছেন আসমা আখতার লিজা, সুরভী রায়, মনিকা দেওয়ান, সায়েম মোর্শেদসহ সকল শিল্পী ও কলাকুশলীরা। বাংলাদেশের পুরানো ঐতিহ্য পালাগান মুলতঃ মাটি ও মানুষের জীবনচিত্র গান ও সংলাপের মাধ্যমে উপস্থাপন করে। চাঁদনি রাতে কেরোসিনের হ্যাজাক কিংবা হ্যারিকেনের আলোতে পাড়া প্রতিবেশীরা বাড়ির উঠানে জড়ো হয়ে পালা গানের আসর বসাতো। মনসা কাব্য থেকে শুরু করে  হাসান হোসেন এর কারবালার মাতমে ছিল মুলতঃ বিনোদন আর গল্প-কাহিনির ঐতিহাসিক ধারা বিবরণের বহিঃ প্রকাশ। 

তবে এই পালাগানের উপজীব্য ছিল বর্তমান সময় ও পারি-পার্শ্বিকতা নিয়ে। 
নাটক, নারী ও রাক্ষসী” ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার নির্যাতিত নারীর কথা। মঞ্চায়নে দেখানো হয়েছে নারীর মাঝে যেমন নমনীয়তা রয়েছে ঠিক তার বিপরীতে নারীর মাঝে অন্যায় ও প্রতিবাদের  যে  রুদ্ররূপ ‘রাক্ষসী’ মনোভাব সৃষ্টি হয় তার প্রতিফলন। শুধুমাত্র বিশ্বাসে ভর করে নারী যেমন পারে ভালোবাসার মানুষকে সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে, অনাচারে একই নারীই পারে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দূর্গা ও কালী হয়ে উঠতে। নাটকটিতে একই সময়ের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করা এবং মুহূর্তের মধ্যে নানা রকমের কস্টিউম পরিবর্তন  ছিল দর্শকদের জন্য একটি নতুন চমক!  


প্রদর্শন শেষে আসমা আক্তার লিজা দর্শকদের প্রতি বিনয়াবনত হয়ে জানান, তার দল আয়কৃত অর্থ দিয়ে করোনা কালীন দুঃসময়ে অসহায়দের খাবার বিতরণ করে বাংলাদেশে দুস্থজনদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই বিপুল যান্ত্রিকতার যুগে পালাকার আসমা আক্তার লিজার আবেগের অকৃতিম প্রকাশ হল্ভরা দর্শকদের মন স্পর্শ করেছে। পালাগান ‘বিষ পাবনের নাও’য়ে দর্শক নিজের স্থান-কাল ভুলে মূল চরিত্র জরি'র বর্বরোচিত মৃত্যুতে যেন অভিনয় নয় বাস্তবিকই তার মৃতদেহ ছুয়েছে, জরির মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়েছে,  তার দুঃখে ব্যথিত হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেছে। পালাকার ও নাট্যকার আসমা আক্তার লিজার দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও বিনয় উল্লেখ করার মতো।  
অনুষ্ঠান শেষে সিডনির সুধীজন, নাট্য ব্যক্তিত্ব এবং দর্শক তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে বলেন সিডনীতে এটি একটি ভিন্নধর্মী উপস্থাপনা।  এই আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা ও সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন অভিনেতা ও সংগঠক রহমত উল্লাহ এবং তার দলগত প্রচেস্টা। উপস্থিত অনেক দর্শকদের মতে,  সিডনীর নাট্যজনদের সক্রিয় প্রচেষ্ঠা এবং  আয়োজকদের যথাযথ প্রচারণা ও গঠনমুলক সংশ্লিষ্ঠতার সীমাবদ্ধতার কারণে মন ও মননে বাংলার কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের  প্রতি যত্নশীল  সিডনির অনেক  দর্শক এই ব্যতিক্রমী পরিবেশনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

শিমি কাজী সুলতানা / লেখক , সাংবাদিক

ছবিঃ প্রেরিত