উপ - সম্পাদকীয়

নারী দিবস ও আমরা

নারী দিবস ও আমরা 
- রাহেলা আরেফিন

আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আজ সেই দিন, যেই দিন জাতিগত, গোষ্ঠীগত, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে বৈষম্যহীনভাবে নারীর অর্জনকে মর্যাদা দেবার দিন। এদিনে নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসকে স্বরণ করে এবং ভবিষ্যতের পথ পরিক্রমা নির্ধারণ করে, যাতে আগামী দিনগুলো নারীর জন্য আরও গৌরবময় হয়ে ওঠে।

কোনো কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে, বিজয়ী লক্ষ্মী নারী।
-কবি নজরুল ইসলাম

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের  বিখ্যাত চরণদুটি আমাদেরকে একথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। নারীর অবদান পুরুষ কখনই অস্বীকার করতে পারবে না। অথচ যুগ যুগ ধরে নারীর এই অবদানকে অবদমিত করে রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারী সমাজের মুক্তির একটি পদক্ষেপ মাত্র। নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়।

বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। শুধুমাত্র স্বল্পোন্নত দেশেই নয় নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে উন্নত দেশগুলোতে।

শুধু মাত্র একটি দিবসের মধ্যে আটকে রাখা যাবে না এই দিনটিকে, এই দিনটি হোক প্রতিদিন। নারী দিবস বিশ্বে পালিত হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে ,কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ প্রাধান্য পায়, আবার কোথাও নারীর আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা বেশি গুরুত্ব পায়। কোথাও বা নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার বিষয়টিকে মুখ্য হিসেবে রেখে দিবসটি উদযাপিত করে।

আমাদের অধিকার আদায়ের মশাল আমাদের জ্বালাতে হবে। বিশ্বজুড়ে নারীর অধিকার ও নারীদের অগ্রাধিকার একটি বহুল আলোচিত বিষয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ছিল নারীদের অধিকার, বিশেষত কর্মজীবী নারীদের অধিকার আদায়ের প্রথম প্রচেষ্টা। এর সূত্র ধরে নারীদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর। জাতিসংঘের মাধ্যমে সাক্ষরিত হয়েছে বিভিন্ন চুক্তি ও সনদ। নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এসব চুক্তি ও সনদ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। অনেক ক্ষেত্রে নারীর সুরক্ষায় এসব চুক্তি-সনদ আইনে পরিণত হয়েছে। সমালোচনা থাকলেও আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম।

আমরা নারীরা যদি ব্যাক্তিগত ভাবে সচেতন হই , নিজেদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজেরাই যদি এগিয়ে আসি , তবে কোনো বাধাই আমাদের সামনে বড়  হয়ে দেখা  দিতে পারবে না। নারীদের চ্যালেঞ্জ নিতে শিখতে হবে। এগিয়ে যেতে হবে পুরুষের সমান্তরালে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।

এই প্রবাসে আমরা যেন নারীদের নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি , সেই প্রত্যাশায় বাংলাদেশ লেডিস ক্লাব অস্ট্রেলিয়া গঠন করেছি। আসুন আমরা সম্মিলিত ভাবে আমাদের অধিকার আদায়ে সংগ্রামের মশাল এগিয়ে নিয়ে যাই। শুধু একজন মহিলা হবেন না একজন কিংবদন্তি হোন। একসাথে আমরা এটা করতে পারি।

 

রাহেলা আরেফিন 
প্রেসিডেন্ট , বাংলাদেশ লেডিস ক্লাব অস্ট্রেলিয়া 
সি ই ও , জন্মভূমি টেলিভিশন