শীর্ষ সংবাদ বিনোদন

তারুণ্যে উদ্দীপ্ত প্রবাসী তরুণ তরুণীর সুরের মূর্ছনায় মাতানো একটি সংগীত সন্ধ্যা

তারুণ্যে উদ্দীপ্ত প্রবাসী তরুণ তরুণীর সুরের মূর্ছনায় মাতানো একটি সংগীত সন্ধ্যা

আবু রেজা আরেফিন: ২৯ জানুয়ারী সন্ধ্যায় সিডনির ব্রায়ান ব্রাউন থিয়েটারে যেন বসেছিলো প্রজন্মের মেলা। তারুণ্যে উদ্দীপ্ত একদল উচ্ছসিত তরুণ তরুণীর সুরের মূর্ছনা, বাদ্য যন্ত্রের কারুকার্য ও বাঁশির মোহনীয় সুরে  হল ভর্তি দর্শকদের চমক লাগিয়ে দিয়েছে। সিডনির ইতিহাসে এই প্রথম প্রবাসে বেড়ে উঠা প্রজন্ম এত সুন্দর একটা অনুষ্ঠান উপহার দিলো।

সাবলীল উপস্থাপনা, সুরের ইন্দ্রজালে মোহনীয় করে রেখেছিলো দর্শকদের। পুরো অনুষ্ঠান চলাকালে কাউকে আসন ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। যে দৃশ্য সত্যিই বিরল। বিকেল ৫.৩০ মিনিটে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দর্শকদের অনুরোধে সন্ধ্যা ৬.০০ টায় শুরু হয়। এই সামান্য সময়ের বাবধানের কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন নির্মল চক্রবর্তী।

Diaspora presents Banglay Gaan Gai  এই পোস্টারটি অন্যরকম একটা ধারণার জন্ম দিয়েছিলো। অভিবাসী এই প্রজন্মের সাবলীল পরিবেশনা সবাইকে তাক  লাগিয়ে দিয়েছে। বাংলা ভাষা এবং বাংলার প্রতি তাদের অকৃতিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ফুটে উঠেছিল তাদের তারুণ্যে উদ্ভাসিত পরিবেশনা।  " ও আমার দেশের মাটি তোমার প্রতি ঠেকাই মাথা " এ এক অন্যরকম আবহ তৈরি করে তুলেছিলো , নাড়িয়ে দিয়েছিলো দর্শকদের হৃদয়কে।

ফাবিহা সিদ্দিকী ,রাশনান জামান ,নীলাদ্রি চক্রবর্তী  ,হিমাদ্রী চক্রবর্তী , ফারিন সিদ্দিকী  ও  নিওশা জামান  সুরের ইন্দ্রজালে বিমোহিত করে বেঁধে রেখেছিলো দর্শকদের। বাঁশির সুরে মোহমুগ্ধতায় ও সুরের মূর্ছনায় ফাবিহা দর্শকদের মন ছুঁয়ে গিয়েছিলো । সেই সাথে রাশনানের গায়কী মুন্সিয়ানায় অভূতপূর্ব এক আবেদন তৈরি করেছিলো " আমি বাংলায় গান গাই "।

সিডনির সুপরিচিত মিউজিসিয়ান অভিজিৎ দাঁ তবলা, অক্টোপ্যাড, কাজন বাজানো গানের সাথে তাল মিলিয়ে তৈরি করেছিলো এক ভিন্নমাত্রা।  
ড্রামস বাজানোর পারদর্শিতায় দেখায় হিমাদ্রী চক্রবর্তী। রাশনান জামান , নীলাদ্রি চক্রবর্তী, ফাবিহা সিদ্দিকী , ফারিন সিদ্দিকী ,  নিওশা জামান  পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে কিবোর্ড, পিয়ানো, গিটার,  অন্যান্য যন্ত্র গুলো বাজাচ্ছিল চেয়ার-সিটিং এর মতই ঘুরেফিরে।  বিভিন্ন যন্ত্রে ওদের দখল দেখে হতবাক কানায় কানায় পূর্ণ হল ভর্তি দর্শকরা ।

রাশনানের গাওয়া জেমসের "ভিগি ভিগি " গানটি  গায়কী মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে,  "দিন যায় কথা থাকে ", "বেকারার কারকে হাম" এছাড়া  রাশনানের আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন, পরিবেশনটি ছিল  সিনেমাটিক মুডে ।রাশনানের গাওয়া অন্য  গানগুলো  দর্শকদের  আকৃষ্ট করেছে ভীষণ  ভাবে। 
 
ফাবিহার  "  বিমূর্ত এই রাত্রি আমার মৌনতার সুতোয় বোনা একটি রঙ্গিন চাদর" , "আমি যে তোমার শুধু যে তোমার", সহ অন্য সব পরিবেশনা  পিন পতন নীরবতায় স্তব্ধ হয়ে শুনছিলো দর্শকরা।  

নীলাদ্রি  "ও বেহুলা, দুঃখিনী বাংলা " গানের সাথে দোতারা বাজনা ,নজরুলের  "উচাটন মন ঘরে রয় না, ও চাঁদ সামলে রাখো জোছনাকে, গজল  "ফিরিয়ে দাও" মাইলসের  সেই গান  কেমন জানি বিমোহিত করে ফেলেছিলো দর্শকদের।

এখানেই শেষ ছিলোনা, ছিলো  অন্যরকম চমক, ফারিন এর ফ্যান্টম অফ দা অপেরা, ওয়েলকাম টু হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া আরো সব জনপ্রিয় গানগুলো চমকে উঠার মতো, এছাড়া ফারিনের জ্যাজ আর ফিউশন ছিল এক জাদুকরী পরশ। সি সাথে ছিল নিওশার সালসায় "ডান্স উইথ মি "

অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে শিল্পীদের ছোটবেলার ভিডিও গুলো বিশাল পর্দায় ভেসে উঠে , তাদের ছোটবেলার এইসব দেখে  হাসির রোল পরে যায়  পুরো দর্শকদের মধ্যে এটাও ছিল অন্যরকম পরিবেশনা।

আরো আকর্ষণীয় ছিল বাবা ডাঃ সাব্বির সিদ্দিকী ও মেয়ে ফাবিহা সিদ্দিকীর  গাওয়া "মাঝ রাতে চাঁদ যদি আলো না বিলায়"  দ্বৈত কন্ঠে  গাওয়া এই প্রচুর আনন্দ দেয় দর্শকদের।

পারিবারিক ভাবে সংগঠিত এই গানের দলটি একটি অন্যরকম সৃষ্টি , ছোটবেলা থেকে পরিবারের আগ্রহে বেড়ে উঠেছে এই সব তরুণ শিল্পীরা। পিতা  মাতার চেষ্টা ও অভিজিৎ দাঁ এর নির্দেশনা যাদেরকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। অনুষ্ঠানটিতে যারা মঞ্চে ছিলেন তার হলেন ফাবিহা সিদ্দিকী ,রাশনান জামান ,নীলাদ্রি চক্রবর্তী  ,হিমাদ্রী চক্রবর্তী , ফারিন সিদ্দিকী  ও  নিওশা জামান

এই পুরো অনুষ্ঠানটি পেছনের কারিগর ছিলেন নিশাত সিদ্দিকি রিপা, বদিউজ জামান নাদিম, ডাঃ সাব্বির সিদ্দিকি, নাজমা জামান , নির্মল চক্রবতী ও মালা ঘটক চৌধুরী।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সংশ্লিষ্ট সকলকে এবং দর্শকদের ধন্যবাদ জানান ডাঃ সাব্বির সিদ্দিকি এবং নিশাত সিদ্দিকি ।  
"কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই" এই গানটি শিল্পী ,কুশলী ও আয়োজকরা মিলে গাইতে থাকলে হল ভর্তি দর্শক তাদের সাথে সুর মিলান।