শীর্ষ সংবাদ কমিউনিটি

অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবনা ভোটে পরাজিত

জন্মভূমি রিপোর্টঃ সিডনির দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বাঙালি মুসলমানদের বৃহত্তম  সংগঠন অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম ওয়েলফেয়ার সেন্টার। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ওয়েলফেয়ার সেন্টারটি অত্র এলাকার একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন হিসাবে কাজ করে আসছে। বর্তমানে এই সংগঠনটির কিছু আজীবন সদস্যদের আনীত একটি প্রস্তাবনা নিয়ে একটি জটিলতার সৃষ্টি হয়।

ওই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে “কোন সদস্য যদি ৩ বার সভাপতি অথবা সাধারন সম্পাদক পদে অথবা দুটি পদ মিলিয়ে ৩ বার দায়িত্ব পালন করে থাকেন তবে তার জীবনদশায় ঐ পদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা  করতে পারবে না। এটা যারা ২০২২ সালে সভাপতি বা সাধারন সম্পাদক পদে ছিল তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এবং ২০২৩ সালের জুন থেকে কার্যকর হবে” । আজ ১২ ফেব্রুয়ারী (রবিবার) ২০২৩ সকাল ১০.০০ টায়, AMWC Centre, 13-17 Eagleview Road, Minto.তে  এ নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়  বিশেষ সাধারণ সভা ।

যেহেতু সংবিধানে বলা আছে  ১০% বা তার বেশী আজীবন সদস্যরা যদি চান তাহলে এই সভা ডাকা যেতে পারে। ৩০ দিনের মধ্যে কমিটি সভা আহবান করতে হয়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারনে বর্তমান কমিটির সভাপতি ড.আনিসুল আফছার আজ ১২ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০ টায় বিশেষ জরুরী সভা আহ্বান করেন।

এই সংগঠনের আজীবন সদস্য রয়েছেন ৯৭০ জন (যে সকল সদস্যরা গত এজিএম এর আগে নির্ধারিত ১ হাজার ডলার পরিশোধ করেছেন) এবং অস্থায়ী আজীবন সদস্য ৪৯৯ জন ( যারা কিস্তিতে ওই এক হাজার ডলার পরিশোধ করছেন ) তবে অস্থায়ী সদস্যদের কোনো ভোটের অধিকার থাকে না।

অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ইমাম আব্দুল হাদি তানভীর শুরুতেই পবিত্র কোরআন শরীফ থেকে তেলোয়াত এবং পরে তিনি  বাংলায় তর্জমা করেন। সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর খান মুন এর অনুপুস্থিতির কারণে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর ভূঁইয়া সভার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর জন্য সভাপতি ডঃ আনিসুল আফসারকে আহবান করেন। ডঃ আনিসুল আফসার সভার কার্যক্রম শুরু করলে এই সভার আমন্ত্রণ জানানোর পদ্ধতির  বৈধতা  নিয়ে কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হন। এই সভার আমন্ত্রণ পত্রটি ইমেইলে পাঠানো অসাংবিধানিক বলে মতামত দেন কয়েকজন।

এ নিয়ে একটি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বিশেষ করে একটি মসজিদের ভেতর এধরণের ঘটনায় অনেকে হতাশা প্রকাশ করেন। সভাপতি এব্যাপারে  ব্যখ্যা দেন। গত এজিএম এ একই মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হলে তখন কোনো প্রতিবাদ হয়নি এখন কোনো এ নিয়ে হৈচৈ হচ্ছে এ নিয়ে অনেককে কথা বলতে শোনা যায়।  

পরিস্থিতি শান্ত হলে সভার কার্যক্রম আবারো শুরু হয়। সিঙ্গেল এজেন্ডা নিয়ে ডাকা এই সভায় অনেকে অতীতের  ঘটনা ও নানান প্রশ্ন তুলেন। 
মূলত ২০১৫ সালের প্রস্তাবিত সাংবিধান সংশোধন নিয়ে আলোচনা হয়। সে সময় সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাবনা আনা হলেও তা ফেয়ার ট্রেডিং এ জমা দেয়া হয় নাই বিধায় ওই সংশোধণীর কোনো বৈধতা নেই বলে জানানো হয়।

 

 

দীর্ঘ আলোচনায় অংশ নেন প্রাক্তন সভাপতি করিম ইকবাল, প্রাক্তন সভাপতি ডাঃ মোহাম্মদ ইলিয়াস, ড. মাকসুদুল বারী , মামুনুর রশিদ , আব্দুল জলিল , সফিকুল আলম ,জাকির হোসেন,কাউন্সিলর  ইব্রাহিম খলিল মাসুদ , আবুল সরকার, কাওছার আহমেদ, মনসুর আহমেদ প্রমুখ।

সংবিধানের ধারার কিছু পরিবর্তনের আনার প্রস্তাবনার জন্য সদস্যদের মতামত আহ্বান করা হয়। যারা সশরীরে উস্থিত থাকতে পারবেন না তাদেরকে প্রক্সি ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। যারা  উপস্থিত ছিলেন তারা সরাসরি ভোট দেন। এই ভোটাভোটি কার্য পরিচালনায় সহায়তা করেন কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী , কাউন্সিলর ইব্রাহিম খলিল মাসুদ, আবু রেজা আরেফিন, ড.বোরহান উদ্দিন ও  হাবিবুর ভূঁইয়া।

 

কমিটির সভাপতি ড.আনিসুল আফছার এই ভোটাভোটির ফলাফল ঘোষণা করেন ,ভোট পরিচালনার জন্য নির্বাচিত ব্যাক্তিবর্গ ও উপস্থিত সদস্যদের সামনে। ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায় প্রক্সি ভোট ছিল ৬৭২ টি , যার মধ্যে ২২০টি  প্রক্সি ভোট পরে সাংবিধানিক পরিবর্তনের পক্ষে আর  বিপক্ষে ৪৫২ টি। উপস্থিত ৭২ জন ভোটারদের মধ্যে ১৬ জন পক্ষে এবং বিপক্ষে ৫৬ জন ভোট দেন। ৭৪৪ ভোটারেরা মধ্যে ২৩৬ জন পক্ষে এবং ৫০৮ জন বিপক্ষে ভোট দেন। সাংবিধানিক পরিবর্তনের বা সংশোধনের জন্য প্রয়োজন ৫৫% ভোট সেই  হিসেব অনুযায়ী ৩১.৭২% ভোট পরে পক্ষে এবং বিপক্ষে ভোট পরে ৬৮.২৮% , সেই হিসাবে আনীত এই সংশোধনী বাতিল হয়ে যায় এবং পূর্ববর্তী সংবিধান সচল থাকে।

নির্বাচনের  ফলাফল ঘোষণার করার পর এই সভার সভাপতি ড.আনিসুল আফছার  সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি টানেন।