শীর্ষ সংবাদ বাংলাদেশ

কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন

কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ঢাকা ব্যুরো: প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। কিংবদন্তি এই সাহিত্যিকের মৃত্যুবার্ষিকীতে চ্যানেল আই পরিবার তাঁর স্মরণে কোরআন খানি ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। রাবেয়া খাতুনের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে চ্যানেল আই পরিবার। তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন স্বজন, অনুরাগী এবং বিশিষ্টজনেরা।

স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত রাবেয়া খাতুন ২০২১ সালের এই দিনে মারা যান। উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, কিশোর উপন্যাস, স্মৃতিকথা, চলচ্চিত্র ও নাট্য জগতেও বিচরণ ছিল রাবেয়া খাতুনের। কথাসাহিত্যিক হিসেবে বেশি পরিচিত হলেও এক সময় শিক্ষকতা করেছেন, সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘদিন।

তিনি উপন্যাস লিখেছেন পঞ্চাশটিরও বেশি এবং ৪শ’র বেশি ছোটগল্প। ১৯৬৩ সালে প্রথম উপন্যাস মধুমতি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই শক্তিমান কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। রাবেয়া খাতুনের স্বামী প্রয়াত ফজলুল হক ছিলেন দেশের চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রথম পত্রিকা ‘সিনেমা’র সম্পাদক ও বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘ প্রেসিডেন্ট’ এর পরিচালক।

রত্নগর্ভা রাবেয়া খাতুন ছিলেন চার সন্তানের জননী। জ্যেষ্ঠ পুত্র ফরিদুর রেজা সাগর খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, কনিষ্ঠ পুত্র ফরহাদুর রেজা প্রবাল স্থপতি, বড় মেয়ে কেকা ফেরদৌসী খ্যাতিমান রন্ধনবিদ ও ছোট মেয়ে ফারহানা কাকলী একজন সুগৃহিনী। গত ২৭ ডিসেম্বর রাবেয়া খাতুনের ৮৭তম জন্মবার্ষিকীতে বাংলা একাডেমিতে ‘রাবেয়া খাতুন কথাসাহিত্য পুরস্কার’ প্রদান করা হয়।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কারসহ বহু সম্মাননায় ভূষিত হন রাবেয়া খাতুন।
গত বছরের ৩ জানুয়ারি নিজের বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহীয়সী এই নারী। রাবেয়া খাতুন এর জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকার বিক্রমপুরে তার মামার বাড়িতে। অবশ্য তার বাবার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে।

১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই সম্পাদক ও চিত্রপরিচালক, বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’-এর পরিচালক এটিএম ফজলুল হকের সঙ্গে রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। মহৎপ্রাণ এ কথাসাহিত্যিকের চার সন্তান- ইমপ্রেস টেলিফিল্ম চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, রন্ধন বিশেষজ্ঞ কেকা ফেরদৌসী, স্থপতি ফরহাদুর রেজা প্রবাল ও ফারহানা কাকলী।

রাবেয়া খাতুন রচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মেঘের পর মেঘ’ অবলম্বনে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘মেঘের পরে মেঘ’ এবং ২০১১ সালে তার আরেকটি জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মধুমতি’ অবলম্বনে পরিচালক শাহজাহান চৌধুরী একই শিরোনামে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘মধুমতি’। এছাড়াও অভিনেত্রী মৌসুমী ২০০৩ সালে তার লেখা ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ অবলম্বনে একই শিরোনামে নির্মাণ করেন একটি চলচ্চিত্র।

লেখালেখির পাশাপাশি রাবেয়া খাতুন শিক্ষকতা করেছেন। সাংবাদিকতাও করেছেন। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমির কাউন্সিল মেম্বার। জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের গঠনতন্ত্র পরিচালনা পরিষদের সদস্য, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরিবোর্ডের বিচারক, শিশু একাডেমির কাউন্সিল মেম্বার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘নতুন কুড়ি’র বিচারক।

লেখালেখির জন্যে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। তার মধ্যে আছেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার-১৯৭৩, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার -১৯৮৯, একুশে পদক-১৯৯৩,বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ -১৯৯৪, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক-১৯৯৫, জসিমউদ্দিন পুরস্কার-১৯৯৬, শেরে বাংলা স্বর্ণপদক-১৯৯৬, শাপলা দোয়েল পুরস্কার-১৯৯৬, টেনাশিনাস পুরস্কার -১৯৯৭, ঋষিজ সাহিত্য পদক-১৯৯৮, অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার-১৯৯৮, লায়লা সামাদ পুরস্কার -১৯৯৯, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৯৯৯, মিলেনিয়াম এ্যাওয়ার্ড -২০০০, টেলিভিশন রিপোটার্স এ্যাওয়ার্ড -২০০১, বাংলাদেশ কালচারাল রিপোটার্স এ্যাওয়ার্ড -২০০২, শেলটেক পদক- ২০০২ এবং মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার-২০০৫ ইত্যাদি।
ছবি: ফাইল ফটো